মমতা
– লোপামুদ্রা ব্যানার্জী
দূর্গাপুর শহরের লাগোয়া এই গ্ৰামখানি বড্ড সবুজে ঘেরা। দূর্গাপুরে দূষণের মাত্রা লাগাম ছাড়া হলেও এই গ্ৰামটিতে আজও বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া যায়। গ্ৰামের হেলথ সেন্টারে নার্সের চাকরি নিয়ে এসেছে নীলা।
প্রথমে ভেবেছিল সিটি সেন্টারের দিকে ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকবে। কিন্তু গ্ৰামটির সুন্দর পরিবেশ তাকে মুগ্ধ করলো।
হেলথ সেন্টারে বেশকিছুটা দূরে একটা পুকুর আছে। আজও ওখানকার মানুষ ঘাট সরে। সকাল হলেই হাঁসের পাল প্যাক প্যাক করতে করতে লীনার ঘরের পাশ দিয়ে পেরিয়ে যায়।
একটি মহিলা রোজই হাঁসগুলোর সঙ্গে যায়। এমন ভাবে হাঁসগুলোর সঙ্গে যায় দেখে মনে হয় যেন কোন মা তার বাচ্চাদের খুব সাবধানে রাস্তা পার করছে।
এই অচেনা মহিলাটিকে দেখে লীনার মনে অদ্ভুত সব কৌতুহল জাগে। মাঝে মাঝে ভাবে আজ আলাপ করতেই হবে। কিন্তু সেই রকম সময় সুযোগ কিছুতেই আসছে না।
একদিন বিকাল বেলায় লীনা হেলথ সেন্টার থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা নিয়ে রাস্তার ধারের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে হঠাৎ কিছু কুমন্তব্য তার কানে এল। ঝুঁকি মেরে দেখে এই মহিলাটি কাউকে বেদম গালাগালি করছে।’ সব বড়লোক হইছে। চোখের মাথা খেইছে। ওলাউটোরা। গাড়িতে চেপে যাচ্ছিস বলে কি রাস্তাঘাটে অন্য কাউকে দেখে পের হবি না। সব হারামজাদার জাত।’
লীনা আর কিছুতেই চুপ থাকতে পারলো না। আগ বাড়িয়ে বলেই ফেললো, ‘আপনি কাকে এতো গালমন্দ করছেন। আপনাকে কি কোনো গাড়ি ধাক্কা মেরে দিয়েছে। আপনি তো সুস্থ আছেন।’
মহিলাটি বড় বড় চোখ করে লীনার দিকে তাকিয়ে বলল ‘ভালো করে ভ্যাল(দেখে)। আমার হাঁসটার পায়ের অবস্থাটা দেখতে লাড়ছিস।’ এই কথাগুলো বলেই মহিলাটি কেঁদে ফেললো। হাঁসটা কোলে করে তুলে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটা দিল।
লীনা আর দেরি না করে তার রুমটা লক করে মহিলাটির পিছু নিল। দৌড়ে গিয়ে বললো ‘চলুন আমরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পশু চিকিৎসার আমি কিছু জানি না। তবুও ওর পায়ে একটা ব্যান্ডেজ করে দেবো চলুন।’
মহিলাটি লীনার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তুই এইখানকার নার্স দিদিমনি। পারবি আমার মঙ্গলাকে সুস্থ করতে।’
লীনা বলে ‘মঙ্গলাও অসুস্থ বুঝি?’
মহিলাটি বলে ‘আমার কোলেই তো মঙ্গলা। চল তবে পা চালাই। পট্টি বেঁধে দে দিখনি।’
কিছুক্ষণ এর মধ্যে হাসপাতাল চত্বরে গোটা চারেক গরু আরো কতগুলো হাঁস এসে হাজির। সিকিউরিটি যতই তাড়ায় তারা সেখান থেকে নড়ে না।
লীনা তো গরু দেখে খুব ভয় পায়। সে তো চিৎকার করে সিকিউরিটির ওপর।
মহিলাটি তখন বলে, ‘তুদের বড়ো ভয়। উরা মানুষের থেকে অনেক ভালো। তু আমার সঙ্গে আয়। কিছু করবেগ নাই।’
তারপর মহিলাটি গরুগুলোকে, হাঁসগুলোকে এমন করে বকাবকি করলো তা দেখে লীনা অবাক। মনে হলো মা যেন সন্তানদের বকছে। গরু, হাঁস সবগুলো পিছুপিছু চললো মহিলাটির সঙ্গে।
লীনা তো হতভম্ব। সে সিকিউরিটিকে জিজ্ঞাসা করে ‘তুমি এনাকে চেনো?’
সিকিউরিটি বলে ‘ম্যাডাম উনি এখানকার ক্লাবের সভাপতির স্ত্রী। বাঁজা মানুষ তো।গরু, হাঁস, পায়রা এইগুলোই নিয়েই সারাদিন কাটে ওনার।’
লীনার এই গ্ৰাম্য মহিলাটির জন্য শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে গেল। মুখ ফুটে বলে উঠলো, ‘পশু, পাখীর প্রতি এতো প্রেম, এতো মায়া, মমতা।’ মমতা কথাটি শোনা মাত্রই সিকিউরিটি আবার বলে ওঠে ‘ম্যাডাম ওনার নামও কিন্তু মমতা।’
গল্গ হলেও নিশ্চয় সত্যি ঘটনা অবলম্বনে লেখা হবে। ভালো লাগলো।।
একদম বাস্তব ঘটনা।যাঃ আমার মন ছুঁয়ে গিয়েছিল।
গল্প হলেও নিশ্চয় সত্যি ঘটনা অবলম্বনে লেখা। ভালো লাগলো।।
ধন্যবাদ